আক্সিজেন আবিষ্কারের ইতিহাস কি?

আক্সিজেন আবিষ্কারের ইতিহাস কি?

অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানী অ্যান্টনি

ল্যাভয়সিয়ে অক্সিজেন বা অম্লজান নামটি নির্দিষ্ট

করেন, কারণ তখন মনে করা হতো সকল

অম্লের মধ্যে অম্লজান বিদ্যমান থাকে যা

ভুল ছিল। অক্সিজেনের যোজ্যতা সাধারণ

২। এই মৌলটি অন্যান্য মৌলের সাথে

সাধারণত সমযোজী বা আয়নিক বন্ধন

দ্বারা যৌগ গঠন করে থাকে। অম্লজান

গঠিত সাধারণ কিছু মৌলের উদাহরণ দেয়া

যেতে পারে: পানি (H 2O), বালি (SiO 2 ,

সিলিকা) এবং আয়রন অক্সাইড (Fe 2O3 )।

দ্বিপরমাণুক অম্লজান বায়ুর প্রধান দুইটি

উপাদানের একটি। উদ্ভিদের

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সময় এই

মৌলটি উৎপন্ন হয় এবং এটি সকল প্রাণীর

শ্বসনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

আবিষ্কারের ইতিহাস

অম্লজান আবিষ্কারের পূর্বে দুইটি বিষয়

নিয় রসায়নবিদরা সবচেয়ে বেশি দ্বিধার

সম্মুখীন হতেন। একটি হল কোন পদার্থের

দহন সংঘটিত হলে তা বায়ু থেকে কিছু

টেনে নেয় কিনা এবং মানুষ নিঃশ্বাসের

সাথে কি গ্রহণ করে। তখন ধারণা করা

হতো সকল দাহ্য বস্তুর অভ্যন্তরে

ফ্লোজিস্টন নামক এক ধরণের পদার্থ

থাকে। গ্রিকরা যে মৌলিক চারটি

পদার্থের ধারণা করতো, এটি ছিল তার

সাথে আরেকটি। একটি দাহ্য বস্তুতে এ

নিয়ে মোট পাঁচটি পদার্থ থাকে। দহনের

সময় এই ফ্লোজিস্টন দাহ্য বস্তুটি থেকে

কম বা বেশি পারিমাণে বেরিয়ে যায়।

কিন্তু এই ধারণা নিয়ে প্রভূত বিরোধ ছিল।

১৬৭৩ সালে রবার্ট বয়েল সিদ্ধান্তে

পৌঁছেছিলেন যে, সীসা এবং অ্যান্টিমনি

ভস্মীকরণকালে একটি অতি সূক্ষ্ণ আগ্নেয়

পদার্থ ধাতুর দিকে ধাবিত হয় এবং এর

সাথে যুক্ত হয়ে ধাতুর ওজন বৃদ্ধি করে।

অবশ্য এর আশি বছর পর লোমোনোসোভ

লিখেন বয়েলের ধারণাটি ভুল ছিল। তার

মতে দহনের সময় বাতাস অংশ নেয় এবং

বাতাসের কণা ধাতুর সাথে যুক্ত হয় বলেই

তার ওজন বৃদ্ধি পায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে

গ্যাস সংক্রান্ত বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি

সাধিত হয়। ১৭৭৪ সালে বিজ্ঞানী পি.

বায়েন তার গবেষণাপত্রে ভস্মীকরণকালে

ধাতুর ভর বৃদ্ধির কারণ নিয়ে বিস্তৃত

আলোচনা করেন। তিনি বলেছিলেন

সম্প্রসারণযোগ্য এবং সাধারণ বাতাস

থেকে ভারী এক অদ্ভুত ধরণের পদার্থ

ভস্মীকরণের সময় ধাতুর সাথে যুক্ত হয়।

পারদ ঘটিত যৌগের তাপবিযোজনের

মাধ্যমে বায়েন এই গ্যাসটি পেয়েছিলেন।

বিপরীতভাবে ধাতব পারদের সাথে ঐ

গ্যাসীয় পদার্থের বিক্রিয়ায় পারার বর্ণ

লাল হয়ে গিয়েছিলো। দুর্ভাগ্যবশত বায়েন

এ নিয়ে আর গবেষণা করতে পারেননি।

তিনি জানতেনও না যে তিনি প্রকৃতপক্ষে

লাল হয়ে যাওয়া পদার্থটি ছিল

প্রকৃতপক্ষে মারকারি অক্সাইড ।

ঐ একই বছর অর্থাৎ ১৭৭৪ সালে রসায়নবিদ

জোসেফ প্রিস্ট্লে একটি যৌগ নিয়ে

পরীক্ষা আরম্ভ করেন। এর কিছুদিন পূর্বে

তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে, সবুজ

গাছের উপস্থিতিতে বদ্ধ বাতাস (যা

শ্বাসকার্যে সহায়তা করে না) সাধারণ

বাতাসে পরিবর্তিত হয় যা জীবের

শ্বাসকার্যে সহায়তা করে। এই

আবিষ্কারটি রসায়ন এবং জীববিদ্যা

উভয়টির জন্যই এক যুগান্তকারী আবিষ্কার

হিসেবে চিহ্নিত হয়। প্রিস্ট্লেই প্রথম

বুঝতে পেরেছিলেন যে উদ্ভিদ অম্লজান

পরিত্যাপ করে। একই সময় তিনি আরেকটি

পরীক্ষা করে দেখতে পান, সোরার গ্যাস

( নাইট্রোজেন অক্সাইড, সল্টপিটার গ্যাস )

লৌহ চূর্ণের সাথে বিক্রিয়ার মাধ্যমে

এমন একটি বাতাসে পরিণত হয় যা দহনে

সাহায্য করলেও শ্বাসকার্যে সহায্য করে

না। এই বাতাসটি ছিল নাইট্রাস অক্সাইড

ফ্লোজিস্টিন তত্ত্ব অনুসারে যার নাম

তিনি রেখেছিলেন

ডিফ্লোজিস্টিকেটেড সোরার গ্যাস

(dephlogisticated saltpeter gas)। এবার ১৭৭৪

সালের পরীক্ষাটির বিষয়ে আসা যাক। এই

বছরের আগস্ট ১ তারিখে প্রিস্ট্লে একটি

আবদ্ধ পাত্রে লাল মারকারি অক্সাইড

নিয়ে বড় লেন্সের সাহায্যে তার উপর

সূর্যকিরণ ঘনীভূত করে ফেলেন। এতে

যৌগটি ভেঙ্গে গিয়ে উজ্জ্বল ধাতব পারদ

এবং একটি গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই গ্যাসটিই

ছিল প্রকৃতপক্ষে অম্লজান । বেশ কয়েক

বছর পর এই গ্যাসের নামকরণ করা হয়

অম্লজান যা তৃতীয় মৌল হিসেবে স্বীকৃতি

লাভ করেছিল। নাইট্রোজেনের মত এই

মৌলটি বাতাস থেকে প্রস্তুত করা সম্ভব

হয়নি। বরং এটি প্রস্তুত করা হয় কঠিন

পদার্থ থেকে। প্রিস্ট্লে কেবল এইটুক

বলতে পেরেছিলেন যে, নতুন এই গ্যাসটি

বাতাসের উপাদান। কিন্তু আর কিছু বলা

তার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। আর

ফ্লোজিস্টিক তত্ত্বের অনুগাম হয়ে তিনি

এর নামও রেখেচিলেন

ডিফ্লোজিস্টিকেটেড বাতাস।

আবিষ্কারের পর প্রিস্ট্লে প্যারিসে

গিয়ে ল্যাভয়সিয়ে সহ অন্যান্য ফরাসি

বিজ্ঞানীদেরকে বিশদভাবে তার

গবেষণার কথা বলেছিলেন। এই অংশটি খুব

গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রিস্ট্লের চেয়ে

ল্যাভয়সিয়েই এই আবিষ্কারটির মর্ম বেশি

উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

প্রিস্ট্লে একসময় মনে করতেন তার এই

আবিষ্কারটি একটি জটিল পদার্থ। কিন্তু

১৭৮৬ সালে ল্যাভয়সিয়ের ধারণা দ্বারা

অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি একে মৌল হিসেবে

দেখতে শুরু করেন। এ হিসেবে অম্লজান

আবিষ্কারের পিছনে মূল অবদান প্রিস্ট্লে

এবং বায়েনের।কিন্তু প্রকাশক দেরিতে প্রকাশ

করাতে তিনি অক্সিজেনের আবিষ্কারক

হিসেবে নিজের নাম প্রস্তাব করতে

পারেননি। কারণ প্রিস্ট্লের আবিষ্কার

প্রকাশিত হয় ১৭৭৪ সালে। শিলে অম্লজান

উৎপন্ন করেছিলেন অজৈব যৌগের

বিযোজনের মাধ্যমে।

No comments:

Post a Comment

Thanks

Ip Sohel Rana

কি কারণে এই সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন SEO করা 

আপনাদর অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন আমরা এই SEO করবো।এর জন্য সবচেয়ে ভাল উত্তর হল ওয়েব সাইটের ভিজিটর বা ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য আমরা এই S...

Ip Sohel Rana