লরেণ্টজ রূপান্তর


আচ্ছা বন্ধুরা, গ্যালিলিয়ান রূপান্তর দিয়ে কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবনের কাজগুলো সেরে ফেলা যায়। কিন্তু গ্যালিলিয়ান রূপান্তর গুলো আবার তড়িচ্চুম্বকীয় সমীকরণ আবার আইন্সটাইনের স্বীকার্য মান্য করে না। এমন কী একটা রূপান্তর প্রয়োজন না, যেটা সব এসবকিছুই মেনে চলে? এটাই আসলে লরেণ্টজ রূপান্তর, যেটা সময়কে পর্যবেক্ষক নির্ভর বিবেচনা করে।
১৯০৩ সালে শুধু তড়িচ্চুম্বকীয় সূত্রগুলো মেনে নেয় এমন রূপান্তর বের করার স্বার্থে তিনি এই সূত্রগুলো বের করেছিলেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী আইন্সটাইন এই সূত্রগুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য খুঁজে পান, যেগুলোর কারণেই মূলত আজকের আপেক্ষিকতা এই পর্যায়ে এসেছে। আইন্সটাইন এই সূত্রগুলো সহজতর গাণিতিক বিশ্লেষণ করেন, আর তার স্বীকার্যের সাথে এই সূত্রগুলো সঙ্গতিপূর্ণ ছিলো। আইন্সটাইনের স্বীকার্যগুলো ব্যবহার করে আমরা এই লরেণ্টজ রূপান্তরের সূত্রগুলো বের করবো।
প্রথমেই আসি প্রসঙ্গ কাঠামোতে।
আগের মতোই ধরবো S প্রসঙ্গ কাঠামোতে x, y, z, t এর অবস্থান S’ কাঠামোতে x’, y’, z’, t’. এবার ধরলাম S কাঠামোতে আছে ব্যাটম্যান। আর S’ কাঠামোতে আছে সুপ্যারম্যান। সুপ্যারম্যান অনেক গতিতে উড়ে গেলো – ব্যাটম্যান তাকে জানালো তাকে কেমন জানি লাগছে। লরেন্টজ রূপান্তরের কারণেই এমনটা হয়। চলো দেখি আমরা বিষয়টা।
গ্যালিলিয়ান প্রসঙ্গ কাঠামোতে আমরা ধরে ছিলাম,
x’ = x – vt
ওটা ভুল ছিলো, সংশোধনের জন্য সামনে একটা k লাগায় দিবো। এখন,
x’ = k( x – vt)
পরে আমরা এই k এর মানটা বের করে ফেলবো। তো k এর মানটা এমন হওয়া লাগবে যেন গতিবেগ v আলোর বেগের তুলনায় কম হয় তখন গ্যালিলিয়ান রূপান্তরের মতো হয়ে যায়।
এখন আসি, x এর মান কেমন হবে। বন্ধুরা, আইন্সটাইনের প্রথম স্বীকার্য অনুযায়ী, পরস্পর সাপেক্ষে সুষম বেগে গতিশীল সকল কাঠামোতে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র গুলো একই। এর মানে কী? সহজ ভাষায়, এর মানে আমরা x’ =
k×(x–vt) বের করেছি, গ্যালিলিয়ান রূপান্তর এর সামনে একটা k গুণ করে। এবার, x এর মান হবে গ্যালিলিয়ান রূপান্তরে x = x’ + vt
তাই এবার,
x = k( x’ + vt)
তো আমরা দুইটা সমীকরণ পেলাম।
x’ = k( x -vt)
x = k( x’+vt’)
আবার, আইন্সটাইনের দ্বিতীয় স্বীকার্য থেকে আমরা জানি যে, আলোর বেগ সর্বদাই ধ্রুব, তা যেখান থেকেই পরিমাপ করা হোক না কেন। তাহলে, প্রথম কাঠামো থেকে কোনো প্ররযবেক্ষক আলোর বেগ যা পাবেন, দ্বিতীয় কাঠামো থেকে কোনো পর্যবেক্ষক যা পাবেন, দ্বিতীয় কাঠামোতে তাই পাবেন। তাহলে,
x = ct
x’ = ct’
এই মানগুলা যদি আমরা বসাই,
ct’ = k( ct – vt)
= kct( 1 –
vc)
t′t=k(1–vc)
… … … (1)
ct = k( ct’ + vt’)
=kct′(1+vc)
t′t=k(1+vc)
… … … (2)
(1), (2) গুণ করে পাই,
1=k2(1−v2c2)
k=11−v2c2
এবার এই k কেই আমরা আমাদের সমীকরণে বসিয়ে দিবো!
আর একটা কথা, কাঠামোগুলোর আপেক্ষিক গতি বিবেচনার সময় আমরা কিন্তু y আর z অক্ষ বরাবর কোনো গতি ধরি নাই। তাই, দুই কাঠামোতেই y আর z এর মান একই থাকবে।
তাহলে বন্ধুরা, আমাদের সমীকরণগুলো দাঁড়ালো,
x−vt1−v2c2
y’ = y
z’ = y
t’ =
x′c=t−vxc21−v2c2
এই ছিলো লরেণ্টজ রূপান্তর।
এখানে মজার জিনিসটা খেয়াল করি। যদি v এর মান আলোর কাছাকাছি না হয়, মানে সাধারণ কোনো বস্তুর বেগ হয়, v/c এর মান শুন্যের কাছাকাছি হবে। তাহলে, সেই মানের জন্য,
(1 –
v2c2 ≈1
এখন আমরা লরেন্টজ রূপান্তরের সমীকরণগুলো লিখি তো!
x’ = ( x -vt)
y’ = y
z’ = y
t’ = t
দেখলে, আমরা গ্যালিলিয়ান রূপান্তরে ফিরে গেলাম। মানে, সাধারণ বেগে গতিশীল বস্তুর জন্য লরেন্টজ রূপান্তর, গ্যালিলিয়ান রূপান্তরে পরিণত হয়।
এবার সবশেষে আপেক্ষিক বেগ নিয়ে একটু কথায় আসি যেটা নিয়ে বিজ্ঞানীদের এতো গণ্ডগোল লাগলো! স্বাভাবিকভাবে, আমরা ধরে নেই যে দুটি বস্তুর বেগ u আর v হলে তারা যদি একই দিক থেকে আসে তাহলে তাদের আপেক্ষিক বেগ (u-v) আর যদি ভিন্ন দিক থেকে আসে তাহলে আপেক্ষিক বেগ হবে (u+v)।
আলোর বেলায় কিন্তু (c-v) আর (c+v) হবে না কখনো। লরেণ্টজ রূপান্তর থেকে আমরা আপেক্ষিক বেগের সম্পর্কটা এভাবে লিখতে পারি।
প্রথমে ধরি, S কাঠামো থেকে চলমান কোনো বস্তুর বেগ u =
dxdt
তাহলে, S’ কাঠামোর পর্যবেক্ষক সেই বেগ পরিমাপ করবেন u’ =
dx′dt′
এখন,
x−vt1−v2c2
তাহলে, dx’=
dx−vdt1−v2c2
আবার, t’ =
x′c=t−vxc21−v2c2
সুতরাং, dt’ =
x′c=dt−vdxc21−v2c2
তাহলে,
u’ =
dx′dt′=dx−vdtdt−vdxc2=dxdt
−v1−vdxc2dt=u−v1−uvc2
এখন চিন্তা করো S কাঠামো থেকে একটা ফোটন নির্গত হলো। তার বেগ c হলে, S’ কাঠামোতে তার পরিমাপ করা বেগ হবে
=(c−v)1−cvc2
=(c−v)1−vc
=c(c−v)c−v
= c
দেখলে! আমরা তাহলে পেলাম যে শুন্য মাধ্যমের জন্য সকল কাঠামোতে আলোর বেগ সমান!
কিন্তু এখানেই কিন্তু শেষ না। লরেন্টজ রূপান্তর থেকে আমরা বুঝতে পারি সময় পরম কিছু নয়,
যদি বেগ আলোর কাছাকাছি হয় দুইজন পর্যবেক্ষকের কাছে সময়ও ভিন্ন হয়ে যাবে। শুধু সময় না, দৈর্ঘ্য, ভর ও ভিন্ন মনে হবে, এগুলো সবই আপেক্ষিক ব্যাপার। তাহলে, লরেন্টজ রূপান্তর ব্যবহার করে আমরা নিচের রাশিগুলোর আপেক্ষিকতা সম্পর্কে গাণিতিক হিসাব করতে পারি।
1. সময়ের আপেক্ষিকতা
2. দৈর্ঘ্যের আপেক্ষিকতা
3. ভরের আপেক্ষিকতা
আগামী স্মার্টবুকগুলোতে আমরা এগুলো সম্পর্কে খুটিনাটি জানবো!

No comments:

Post a Comment

Thanks

Ip Sohel Rana

কি কারণে এই সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন SEO করা 

আপনাদর অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন আমরা এই SEO করবো।এর জন্য সবচেয়ে ভাল উত্তর হল ওয়েব সাইটের ভিজিটর বা ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য আমরা এই S...

Ip Sohel Rana